বর্তমান এই সময়ে ওয়েবসাইট সম্পর্কে ধারণা নেই এমন মনুষের সংখ্যা খুব কম। কারণ বর্তমানে পৃথিবী জুড়ে সব জায়গায় সব কিছুতে অনলাইন নির্ভর হয়ে যাচ্ছে ।আর এই অনলাইনে নির্ভরতার জন্য যেটি বেশি ভূমিকা রাখছে সেটি হচ্ছে ওয়েবসাইট । নিচে ডোমেইন ও হোস্টিং সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
ডোমেইন
ডোমেইনকে যদি আমরা কোনো বাড়ির ঠিকানার সাথে তুলানা করি তাহলে সঠিক হবে ।কারণ আমরা যদি কোনো ব্যক্তির বাড়ি বা অফিসে যেতে চায় তাহলে সর্বপ্রথম দরকার তার ঠিকানা । তেমনি ইন্টারনেট জগতে কোনো ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হলে দরকার ঠিকানা যার নাম ডোমেইন । ইন্টারনেট জগতে কোনো জায়গায় প্রবেশ করতে গেলে প্রথমে দরকার ডোমেইন নেম।
কয়েকটি উদাহরণ দিলে আরও সহজ হবে যেমন-facebook.com, Youtube.com, google.com এরকম পৃথিবীতে কোটি কোটি ওয়বেসাইট আছে এগুলো হলো ইন্টারনেট জগতের বাড়ির ঠিকানা বা ডোমেইন নেম ।এই ডোমেইন নেম সংখ্যায় হয়ে থাকে যেমন- ১৯০.১৬২.০২.০১ এরকম কিন্তু এটা মানুষের পক্ষে মনে রাখা সম্ভব নয় তাই সংখ্যাকে লেখায় রুপান্তর করা হয়েছে সহজে মনে রাখার জন্য যেমন- facebook.com,যেটা মানুষের পক্ষে মনে রাখা সম্ভব ।
অনেকেই আবার মনে করতে পারে .com শুধু ওয়েবসাইট হয় কিন্তু না আরও অনেক প্রকার হয়ে থাকে (ডট) এর পরে এগুলোকে Extension বলে । কয়েকটি Extension এর নামে দেওয়া হলো-.com .net .org .info .xyz .top .asia .co .bd .fun .tv .me .site .club .edu .it .press .shop এছাড়া বিভিন্ন নামে ডোমেইন হয়ে থাকে । .com .net .org .info এই চারটাকে টপ লেভেল ডোমেইন বলা
হয় এই কয়েকটার দাম একটু বেশি হয়ে থাকে । এই ডোমেইন গুলোকে টাকা দিয়ে কিনতে হয় যা বছর ভিত্তিক হয়ে থাকে । ডোমেইনভেদে দাম কম বেশি হতে পারে তবে বাংলাদেশে ৮০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে ।অনেক সময় কোম্পানির নতুন হওয়ার কারণে ১০০ টাকার নিচে ডোমেইন বিক্রি করে থাকে তবে অনেক সময় Extension এর উপর দাম নির্ধারন হয়ে থাকে ।
হোস্টিং
আপনি যদি বাড়ির ঠিকানা নিয়ে থাকেন তাহলে আপনার অবশ্যই বাড়ি থাকা প্রয়োজন । কারণ বাড়ি না থাকলে ঠিকানা দেওয়া সম্ভব নয় । আর ইন্টারনেট জগতে এই বাড়িটি হচ্ছে হোস্টিং । সেখানে আপনার ব্যবহার্য সকল জিনিসপত্র থাকে ।তেমনি আপনার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন প্রকার জিনিসপ্ত্র রাখতে পারেন যেমন- ইমেজ, লেখা, ভিডিও, অডিও বিভিন্ন ধরনের ফাইল ।
এখন এই ফাইলগুলো এমন একটি কম্পিউটারে রাখতে হবে যেটা ২৪ ঘণ্টা ৩৬৫ দিন অন থাকে । আর এই সুবিধাগুলো দিয়ে থাকে হোস্টং কোম্পানিগুলো । তাদের কম্পিউটারগুলো ২৪ ঘণ্টা ৩৬৫ দিন অন থাকে । তারা টাকার বিনিময়ে এই সার্ভিসগুলো দিয়ে থাকে । আপনি চাইলেয় আপনার কম্পিউটারকে হোস্টিং ই পরিনীত করতে পারেন কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আপনি যদি
কম্পিউটারকে বন্ধ করেন তাহলে ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যাবে । তখন আপনার ভিজিটরের সংখ্যা কমে যাবে । তাছাড়া আপনার সাধারণ কম্পিউটার ২০ ঘণ্টা ৩৬৫ দিন অন রাখা সম্ভব নয় তাই হোস্টিং প্রয়োজন ।কারণ হোস্টিং সার্ভিস প্রভাইডার কম্পিউটারগুলো অনেক শক্তিশালী যা কখনও বন্ধ করার প্রয়োজন পড়ে না । আমরা ওয়েবসাইটে যা কিছু দেখি তার সব কিছু ওয়েবসাইটের হোস্টিং ই জমা আছে ।
হোস্টিং এর প্রকারভেদঃ
ডোমেইন ও হোস্টিং সম্পর্কে জানা হয়েছে এবার হোস্টিং কত প্রকার সে সম্পর্কে জানতে হবে । কারণ Website এর Speed নির্ভর করে Hosting উপর । হোস্টিং বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকা আজ আমরা চার প্রকার হোস্টিং সম্পর্কে জানব।
(১) শেয়ার্ড হোস্টিং (২) ভিপিএস হোস্টিং (৩) ক্লাউড হোস্টিং (৪) ডেডিকেটেড হোস্টিং
(১) শেয়ার্ড হোস্টিং
Share মানে আমরা সবাই কম বেশি অর্থ জানি Share ভাগ । শেয়ার্ড হোস্টিং মানে যে হোস্টিং ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা হয় তাকে শেয়ার্ড হোস্টিং বলে । যদি উদাহরণ হিসেবে বলি তাহলে একটা ফ্লাটের একটা ঘর ভাড়া নিলেন এবং অনেক মানুষ জায়গা ভাগাভাগি করে একই সাথে থাকলেন ।
সেখানে ভাড়া অনেক কম দিতে হতে পারে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে একই সাথে সবাই থাকতে হবে এতে আপনার অনেক সমস্যা হতে পারে । তেমনি আপনি বিশাল হোস্টিং সারভার থেকে কিছু অংশ নিয়ে কয়েক জনে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করাকে শেয়ার্ড হোস্টিং বলে ।এতে দেখা যায় খরচ অনেক কম হয়ে থাকে ।
শেয়ার্ড হোস্টিং এর সুবিধাঃ
(ক) যারা ওয়েব সাইট তৈরি করতে প্রাকটিস করতে চাই তারা অল্প টাকায় শেয়ার্ড হোস্টিং দিয়ে শুরু করতে পারে।
(খ) শেয়ার্ড হোস্টিং এর দাম অনেক কম ।
(গ) অনেক সময় ডোমেইন কিনলে হোস্টিং কোম্পানি থেকে ফ্রিতে শেয়ার্ড হোস্টিং দিয়ে থাকে ।
শেয়ার্ড হোস্টিং এর অসুবিধাঃ
(ক) প্রফেশনাল কাজ করার সময় অনেক সমস্যা হতে পারে ।
(খ) শেয়ার্ড হোস্টিং সাইট হোস্ট করলে সাইট অনেক ধির থাকে ।
(২) ভিপিএস হোস্টিং
শেয়ার্ড হোস্টিং এর থেকে একটু ভালো অবস্থনে আছে ভিপিএস হোস্টিং ।ভিপিএস হোস্টিং এমন যে আপনি একটা ঘর ভাড়া নিলে সেখানে পাঁচ জনের বেশি প্রবেশ করতে পারবে না ।এই পাঁচ জন রুমের সমস্থ জায়গা ব্যবহার করতে পারবে ।তেমনি Web server এ একটা জায়গা কিনলেন সেখানে নির্ধারিত ওয়েব সাইট হোস্টি করা থাকবে অতিরিক্ত কোনো সাইট হোস্ট করা যাবে না ।
ভিপিএস হোস্টিং এর সুবিধা
(ক) শেয়ার্ড হোস্টিং থেকে অনেক ভালো সার্ভিস দিয়ে থাকে ভিপিএস হোস্টিং ।
(খ) অনেক দ্রুত ওয়েব সাইট ভিজিট করা যায় ।
(গ) একটু প্রফেশনাল কাজের জন্য ভিপিএস হোস্টিং ব্যবহার করা যেতে পারে ।
(৩) ক্লাউড হোস্টিং
ক্লাউড বলতে আমরা বুঝি মেঘ ।মেঘের মত যে ওয়েব সাইটের ডাটাগুলো ভেসে বেড়ায় সেগুলোকে ক্লাউড হোস্টিং বলে । যেমন ক্লাউড হোস্টিং সার্ভিসে তাদের বিভিন্ন দেশে হোস্টিং থাকে যদি কোনো কারণে একদেশের হোস্টিং বন্ধ হয়ে যায় তখন অন্য দেশের হোস্টিং সাইট থেকে ওয়েব সাইট চলতে থাকে । যদি এক Server ডাউন থাকে থাকে তাহলে অন্য Server থেকে কাজ হয়ে থাকে । যার কারণে ওয়েব সাইট কখনও বন্ধ হওয়ার সম্ভবনা থাকে না ।
ক্লাউড হোস্টিং এর সুবিধাঃ
(ক) অন্য হোস্টিং থেকে কর্ম ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে ।
(খ) সার্ভার ডাউন হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না কারণ এক সার্ভার ডাউন থাকলে অন্য সার্ভার কাজ করে থাকে ।
(গ) ওয়েব সাইট অনেক বেশি সিকিউর ও ফাস্ট থাকে ।
(৪) ডেডিকেটেড হোস্টিং
হোস্টিং জগতে ডেডিকেটেড হোস্টিং সবচেয়ে ভালো হয়ে থাকে কারণ অন্য হোস্টিং থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে থাকে । শেয়ার্ড হোস্টিং এ অনেক ভাগ থাকে ভিপিএস হোস্টিং এ নির্দিষ্ট পরিমান ভাগ থাকে । ক্লাউড হোস্টিং ই বিভিন্ন জায়গায় সাইট হোস্ট করা থাকে । ডেডিকেটেড সার্ভার হলো সার্ভারটি সম্পূর্ণ আপনার জন্য নিধারিত সেখানে আর কেউ ঢুকতে পারবে না ।
যদি আপনি একটা বাড়িই সম্পূর্ণ কিনে নেন তাহলে সেখানে আর কারো ভাগ থাকে না । সেখানে শুধুমাত্র আপনার থাকার অধিকার থাকে তেমনি ডেডিকেটেড সার্ভারে শুধু মাত্র আপনার ইচ্ছা মত সাইট রাখতে পারবেন ।সেখানে অন্য কেউ এসে কাজ করতে পারবে না ।ডেডিকেটেড হোস্টিং এ আপনি যখন ইচ্ছা তখন প্রবেশ করতে পারবেন।
ডেডিকেটেড হোস্টিং এর সুবিধাঃ
(ক) ডেডিকেটেড হোস্টিং ১০০% নিরাপদ ও কর্ম দক্ষতা অন্যদের থেকে অনেক বেশি।
(খ) যদি অনেক বেশি ভিজিটর একই সঙ্গে আসে তাহলে ওয়েব সাইট ডাউন হওয়ার কোনো ঝুকি থাকে না ।
(গ) যে কোনো ধরনের কাজ খুব দ্রুত করা যায় ।
ডেডিকেটেড হোস্টিং এর অসুবিধাঃ
(ক) ডেডিকেটেড সার্ভারের একটায় অসুবিধা হলো অনেক টাকা খরচ করতে হয় যা সবার পক্ষে সম্ভব নয়।
আশা করি এই পোষ্টে ডোমেইন হোস্টিং সম্পর্কে জানতে পারলেন।