আমাদের ঘুম থেকে ওঠা ও ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সব সময় ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত । বর্তমান ইন্টারনেট ছাড়া আমরা কল্পনা করতে পারি না । কিছু বছর আগে ইন্টারনেট মানুষের জীবনে এত প্রভাব বিস্তার করতে পারে নি । যখন শুধুমাত্র কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা ছিল তখন এর ব্যবহাকারীর সংখ্যা কম ছিল । তখন ইন্টারনেট আসক্তি কম ছিল ।
পরে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা আসায় খুব অল্প সময়ে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে । পরবর্তীকালে ইন্টারনেটের সহজলভ্য ও সোশ্যাল মিডিয়া, কেনাকাটা, ব্যবসা বাণিজ্য, যোগাযোগ এর ফলে ইন্টারনেটের ব্যবহাকারী দিনদিন হু হু করে বাড়ছে । বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হচ্ছে যার ফলে ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি তৈরি হচ্ছে ।
ইন্টানেট আসক্তি এর কারণ
সোশ্যাল মিডিয়া
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ করছে । সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে মানুষ যেন অনেক বেশি সময় সোশ্যাল মিডিয়াতে থাকে । আপনি খেয়াল করে দেখবেন আপনার যে সব জিনিস দেখতে ভালো লাগে সেই সব ভিডিও, লেখা বার বার সামনে আসছে । এইসব দেখতে দেখতে আমরা এক সময় এই সবের প্রতি আসক্তি হয়ে পড়ি ।
শর্ট, রিলস ও টিকটকের ভিডিও
ইউটিউব, ফেসবুক ও টিকটক তাদের ইউজার ধরে রাখার জন্য নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করছে । এই সব ফিচারগুলো মধ্যে অন্যতম শর্ট ভিডিও সিস্টেম । এই ভিডিওগুলো বেশি বড় হয় না । অল্প সময়ের মধ্যে মানুষ বিনোদন পেয়ে থাকে । এই কারণে বেশি পছন্দ করে মানুষ । আপনি যদি অল্প কিছু দিন এই ভিডিও দেখেন তাহলে আপনিও ইন্টারনেট আসক্তি হয়ে যাবেন ।
সোশ্যাল মিডিয়াতে বন্ধু
ফেসবুক, টুইটার, টিকটক বা অন্য যে কোনো সোশ্যাল মিডিয়াতে খুব সহজেই বন্ধু বা ফলোয়ার বানানো যায় । এই সব বন্ধুর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য বেশি পরিমাণ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন যার কারণে ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি বেড়ে যায় ।
থ্রিলার গেমে আসক্তি
স্মার্টফোন আছে গেম খেলে না এমন মানুষ খুব কম আছে । গেম মানুষকে অনেক বেশি আসক্তি তৈরি করে । বর্তমানে পাবজি, ফ্রিফায়ার, জিটিএ এছাড়া আরও অনেক গেম আছে যা মানুষ ঘণ্টার পর খেলে যাচ্ছে । এই সব গেমের কারণে ইন্টারনেটে আসক্তি বেড়ে যাচ্ছে ।
ভার্চুয়াল সেলিব্রেটি ও ইন্টারনেট আসক্তি
টিকটকের এই যুগে সেলিব্রেটি হতে বেশি সময় লাগে না । দেখা যাচ্ছে কেউ কেউ উল্টো পাল্টা ভিডিও বানিয়ে সেলিব্রেটি হয়ে যাচ্ছে । সাধারণ মানুষ এই সুযোগ কাজে লাগাতে গিয়ে অধিক সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করে । যার ফলে তৈরি হচ্ছে আসক্তি ।
বিনোদনের নতুন উৎস
মানুষ আগে বিনোদনের জন্য বই পড়া, বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা বা পরিবার পরিজনের সাথে গল্প করত । কিন্তু দিন পরিবর্তন হয়েছে । এখন সব কিছু আছে তবে সেটা ইন্টারনেট জগতে । এখানে আপনি বিনোদনের জন্য বই পড়া, বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা বা পরিবার পরিজনের সাথে গল্প করত ইন্টানেটের মাধ্যমে । এফলে অধিক সময় ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেট আসক্তি হচ্ছে ।
কৌতুহল ও উৎসাহ
অনেক মানুষ আছে তারা অনেক বেশি কৌতুহল হন যে কোনো বিষয়ে । কারণ ইন্টারনেটে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যায় । মানুষ সব সময় চায় নতুন নতুন তথ্য । নতুন নতুন জিনিস দেখার জন্য অনেক বেশি সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে ।
ইন্টানেট আসক্তি এর প্রতিকার
এই আসক্তি থেকে প্রতিকার পেতে হলে কিছু নির্দেশনা মানতে হবে ।
১) মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে । বিশেষ করে পরিবারের মানুষের সাথে বেশি বেশি সময় ব্যয় করতে হবে ।
২) আমাদের সমস্যা কম বেশি সবারই থাকে । সেইগুলো ইন্টারনেটে প্রকাশ না করে পরিবারের মানুষের সাথে শেয়ার করা । তাহলে সমস্যার সমাধান দ্রুত হবে ।
৩) খেয়াল রাখতে হবে ইন্টারনেট যেন আমাকে ব্যবহার না করে ; আমি ইন্টারনেট ব্যবহার করি । কাজ শেষ ইন্টারনেট অফ । সব সময় সঠিক উপায়ে ইন্টারনেট ব্যবহার কারতে হবে ।
৪) বই খবরের কাগজ প্রিন্ট মিডিয়ার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে ।
৫) খেলাধুলা আমাদের মনকে অনেক সতেজ রাখে । তাই শারিরীক কশরত হয় এমন খেলা করতে হবে । কোনো ভাবে মোবাইল বা ইন্টারনেটে গেম খেলা যাবে না ।
৬) খুব সমস্যার মধ্যে পড়ে গেলে মানুষিক বিষেজ্ঞের কাছে পরামর্শ নেওয়া ।
আরো পড়ুনঃ ক্ষতিকর অ্যাপস ১৩টি এখনই Uninstall করন